নদ-নদী, খাল-বিল, অরণ্য ও প্রাকৃতিক বৈচিত্রে সমৃদ্ধ পটুয়াখালীর মিরজাগজ্ঞ উপজেলার শিকারপুর গ্রামের মীরাবাড়ী। গ্রামের বাসিন্দা মাকসুদা বেগম 
পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। বাবার আর্থিক অস্বচ্ছলতা এবং 
পারিবারিক ও সামাজিক নানা কারণে তার আর হাইস্কুলে ভর্তি হওয়া সম্ভব হয়নি।
স্বামী আজিজুল হক মীরা। মাকসুদা বেগমের 
পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৬ জন। মাকসুদা বেগমের স্বামী একজন কৃষক। কৃষিই তাদের 
আয়ের উৎস্য। তাই দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে সংসার জীবনে যাত্রা শুরু মাকসুদা 
বেগমের। স্বামীর আয় কম বিধায় নিজের ইচ্ছাতে সংসারের প্রয়োজনে তাকেই ধরতে হয়
 সংসারের হাল। স্বামীর স্বল্প আয়ে সংসার চললেও সংসারের নতুন মুখ আসার ফলে 
নুন আনতে পান্তা ফুড়ায় এমন অবস্থায় সে কৃষিকে অবলম্বন হিসেবে বেছে নেয়।স্বামীর
  দুই জৈষ্ঠ জমিসহ বর্গা হিসাবে ৩ জৈষ্ঠ জমিতে ধান, সবজি ও রবিশস্য উৎপাদনে
 ব্যবহার করে সংসারে অবদান রাখতে শুরু করেন। তার  অক্লান্ত পরিশ্রমের 
মাধ্যমে প্রতিবছর গড়ে ১৮ মণ ধান, ৭ মণ পাট, ৫ মণ করলা, ৩০ মণ চিচিঙ্গা, ৪০০
 পিস চাল কুমরা উৎপাদিত হয়। নিজের সংসারের চাহিদা মেটানোর পর বাকি উৎপাদিত 
ফসল বিক্রি করে তিনি যে টাকা আয় করেন তা দিয়ে ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা ও 
নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে আজ তিনি সক্ষম। কৃষি কাজের পূর্বে পাটখড়ির যে
 বসতঘরটি ছিল তা আজ কাঠের ঘরে রূপ নিয়েছে। হালের গরু বিক্রি করে তিনি 
মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় মেয়ে এসএসসি পাস করেছে এবং বড় ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণীতে 
পড়ালেখা করছে। কৃষির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের কথা শুনে উপজেলা কৃষি
 অফিস তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কৃষি অফিস থেকে ধান ও সবজি 
চাষের ওপর প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং কৃষি অফিস থেকে উপহারস্বরূপ একটি সেচ 
পাম্প পেয়েছেন।আজ তিনি নিজের 
প্রচেষ্টায় স্বাবলম্বী, নিজের উদ্যোগে সবার সহায়তায় গড়েছেন কৃষি ক্লাব 
(আইসিএম)। ক্লাবটি এখন ৫০ জন কৃষক-কিষানির মিলনমেলায় পরিনত হয়েছে। দিনের 
বেশিরভাগ সময় তাকে কৃষিকাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। আবার বাড়ি ফিরে সংসারের নানা 
কাজও করতে হয়। তার স্বামী এবং ছেলে-মেয়ে তার কাজে সহায়তা করে বিধায় তার 
পক্ষে সবকিছু সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে। মাকসুদা বেগম কৃষি অফিসের সহায়তায় 
তার এলাকার নারী কৃষকদের বিভিন্ন কৃষি কাজের ওপরে প্রশিক্ষণ প্রদান 
করিয়েছেন। পাশাপাশি কৃষি অফিস থেকে বীজ, সার ও কিটনাশক ওষুধ সংগ্রহ করে 
সবার মাঝে বিতরণ করেন।মাকসুদা বেগমের
 সঙ্গে আলাপকালে তিনি যুগান্তরকে জানান, গ্রামের সব নারী কৃষক ও পুরুষদের 
সমন্বয়ে সমবায় কৃষি খামার গড়ে তুলবেন এবং মাছ চাষ করবেন। আবার সমবায় 
ভিত্তিতে বাজারজাত করবেন। মাকসুদা বেগম ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা কৃষি অফিস, 
উপজেলা বন বিভাগ এবং উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে কৃষিবিষয়ক সাহায্য প্রত্যাশা 
করেন। একটি ওষুধ ছিটানো মেশিন এবং জমি চাষের একটি ট্রাক্টর মেশিন পেলে কৃষি
 কাজের জন্য সহায়ক হয়, তাই সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়ার আশা করেন মাকসুদা
 বেগম।
                                                 
                                            
উত্তর সমূহ